পিনাক-৬ এর যে করুন প্রেমকাহিনি যা টাইটানিকের প্রেমকাহিনিকেও হার মানাবে
|
২৪ শ্রাবণ ১৪২১ |
Friday, August 8, 2014
এ এক প্রেমকাহিনিই। শামীম ভালোবেসেছিলেন হাবিবাকে। হাবিবা ভালোবেসেছেন শামীমকে। দইয়ের জন্য বিখ্যাত বরিশালের গৌরনদীর দুই পড়শি শামীম আর হাবিবা। এলাকার নাম তরকিবন্দর।
ছয় বছর ধরে তাঁদের প্রেম। যখন প্রথম তাঁদের হৃদয়বদল ঘটে, তখনো তাঁরা ছোট। তখনো তো তাঁরা ছাত্র। তখন হাবিবার বয়স কুড়ি।
কাজেই তাঁরা অপেক্ষা করেন কখন তাঁদের লেখাপড়া শেষ হবে। কখন তাঁরা দাঁড়াবেন নিজের পায়ে।
দীর্ঘ সাড়ে পাঁচ বছর পরে শামীম চাকরি পান ঢাকার একটা ওষুধ কোম্পানিতে। আর হাবিবাও অনার্স পাস করেন।
হাবিবা চলে যান ঢাকায়। বরিশাল থেকে। তাঁরা বিয়ে করেন।
কিন্তু প্রেমের কাহিনিতে চড়াই-উতরাই থাকে।
তাঁদের বিয়েতে আসে বাধা। দুই পরিবার এই বিয়ে প্রথমে মেনে নিতে চান না।
কিন্তু মা-বাবার দোয়া তো লাগবেই।
মা-বাবার মান ভাঙাতে হবে।
এই ঈদের ছুটিতে সেই কাজটাই করতে হবে।
শামীম চললেন তাঁর বাড়িতে।
মা-বাবা নিজেরই মা-বাবা। ছেলের ওপর কত দিন আর থাকতে পারেন অভিমান করে।
তাঁরা রাগ-ক্ষোভ ভুলে যান। ছেলেকে বলেন, যাও, বউ নিয়ে এসো। বাড়িতে অনুষ্ঠান করো। আত্মীয়স্বজনকে দাওয়াত করে খাওয়াই।
এর চেয়ে বড় সুখবর আর কী হতে পারে! শামীম মোবাইল ফোনে সুখবরটা জানান হাবিবাকে।এখন হাবিবাকে নিয়ে আসতে হবে তরকিবন্দরে। তাঁদের বাড়িতে।
শামীম বলেন, আমি ঢাকায় আসি। কেনাকাটা করি। তারপর তোমাকে নিয়ে বাড়ি আসব।
হাবিবা বলেন, না না, কেনাকাটা করার কিছু নেই। আমি মাওয়া ঘাটে আসি। লঞ্চে উঠে পড়ি।
শামীম বলেন, তাহলে আমিও মাওয়া ঘাটে আসি। তারপর দুজনে একসঙ্গে বাড়ি ফিরব। তুমি একা একা বাড়ি আসবে কী করে? লোকেই বা কী বলবে? আর তোমাকে কত দিন দেখি না। আসি।
তা-ই সই। হাবিবা ঢাকা থেকে রওনা দিলেন মাওয়ার দিকে।
শামীমও রওনা দিলেন গৌরনদী থেকে। ঢাকার উদ্দেশে। পথে তিনি উঠে পড়লেন লঞ্চে।
কোন লঞ্চ? মোবাইল ফোনে হাবিবা জিজ্ঞেস করেন।
পিনাক-৬। শামীম জবাব দেন।
শোনো। লঞ্চে যদি দেখো বেশি ভিড়, তাহলে এইটাতে উঠো না। পরের লঞ্চে ওঠো।
হাবিবা ঘাটে অপেক্ষা করছেন। ওই তো একটা লঞ্চ আসছে। ওটাই কি পিনাক-৬। তিনি ফোন করেন। এই, তোমার লঞ্চ কি ঘাটের কাছে এসে গেছে?
হ্যাঁ।
আমি তোমার লঞ্চ মনে হয় দেখতে পাচ্ছি।
তারপর…
আহা। ওই দৃশ্য দেখে কার প্রাণে সইবে?
আপনারা কি কেউ দেখেছেন টেলিভিশনে কিংবা ইন্টারনেটে লঞ্চটির ডুবে যাওয়া। মাত্র কয়েক সেকেন্ডে একদিকে কাত হয়ে ডুবে গেল লঞ্চটি। একটা আস্ত লঞ্চ ছিল। লঞ্চটাতে কত মানুষ। মুহূর্তে ডুবে চিহ্নহীন ঢেউয়ের নিচে হারিয়ে গেল সব। এতগুলো মানুষের জীবন। তাদের স্বপ্ন-সাধ, তাদের সম্পর্ক। একেকটা মানুষ তো সংখ্যা নয়। তারা একেকটা মানুষের জীবন। প্রতিটা মানুষের জন্মের সময় কত আনন্দ। সে যখন প্রথম কথা শিখল, প্রথম হাঁটা শিখল, প্রথম স্কুলে গেল।
শামীমের মতো যখন সে প্রেমে পড়ল। যখন সে বিয়ে করল। যখন সে তার নববধূ হাবিবাকে বাড়ি নিয়ে যাবে, অনুষ্ঠান করবে বলে বেরিয়ে পড়ল।
সেই দৃশ্য কী করে সইবেন হাবিবা? তিনি বারবার অজ্ঞান হয়ে যান।
তার অপেক্ষা আর ফুরোয় না।
শামীম আর আসেন না …..
- স্বনাম খ্যাত লেখক আনিসুল হকের ফেইসবুক পেজ থেকে নেয়া
যেভাবে ডুবে যায় পিনাক-৬ লঞ্চ