এ পাতার অন্যান্য সংবাদ
জুয়েলারী জগতে আলোচনার কেদ্রবিন্দুতে “ডায়মন্ড সিটি” বাংলাদেশ বিমানে নিয়োগ পাচ্ছে ৩০০ নতুন কেবিন ক্রূ , ছেলেমেয়ে উভয়ই ইউএস-বাংলার বহরে নতুন বোয়িং যুক্ত ‘চাকরির হতাশায়’ ঢাবি গ্রাজুয়েটের আত্মহত্যা ! এক যুগে পদার্পন করলো জবস এওয়ান ডটকম তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতুর নির্মাণ শুরু মে মাসে: সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বান্দরবানে বাস খাদে, নিহত ৭ মোবাইল সেটও করতে হবে নিবন্ধন বিজয় দিবসে দীর্ঘ দিন পর স্বতঃস্ফূর্তভাবে রাজপথে বিএনপি জাতীয় পরিচয়পত্র ছাড়া নিবন্ধিত সিমের মেয়াদ ৬ মাসঅনাথ শিশুদের ঠাঁই পুলিশের কোলে
| ২ ভাদ্র ১৪২১ | Sunday, August 17, 2014চার বছরের মেয়ে শিশুটির নাম মিম। তার ভাইটির বয়স দুই, নাম আলিফ। যে বয়সে বাবা-মায়ের পরম মমতায় তাদের হাসিখুশিতে দিন কাটানোর কথা, সেই বয়সেই শিশু দুটি নিয়তির নিষ্ঠুর নির্মমতার শিকার হয়েছে। কয়েক মাস আগে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন বাবা শাহজাহান। রোগে ভুগে গত ৪ আগস্ট মা নাজমা বেগমও পড়ি জমিয়েছেন না-ফেরার দেশে। নিকটাত্মীয়দের কেউ মিম-আলিফের দায়িত্ব নিতে চায়নি। তবে সবাই মুখ ফুরিয়ে নিলেও আস্থার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার। সেখানেই নারী পুলিশ সদস্যদের আদর-যত্নে বেড়ে উঠছে শিশু দুটি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বাবা-মাকে না পেয়ে সারাক্ষণ মন খারাপ থাকে মিম ও আলিফের। ‘মা’ বলে কান্নাকাটি করে। নারী পুলিশ সদস্যদের যাঁকে সামনে পায় তাঁকেই মা বলে জড়িয়ে ধরে। তাই বিভাগীয় দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি অনাথ শিশু দুটিকে পরম মমতায় বুকে টেনে নিয়েছেন নারী পুলিশ সদস্যরা।
ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে দায়িত্বরত ঢাকা মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (ডিসি) শামীমা বেগম বলেন, ‘ওরা বর্তমানে পুলিশের সন্তান পরিচয়েই বেড়ে উঠছে। স্বজনরা এগিয়ে না আসলে সে ক্ষেত্রে সমাজের কেউ যদি ওদের দায়িত্ব নিতে চায় তাহলে আদালতের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তবে এতিম শিশু দুটির জন্য কষ্ট হয়। চোখের সামনে যখন মা বলে চিৎকার করে তখন আমাদের চোখেও জল এসে যায়। বাবার কথাও বলে। শত ব্যস্ততার মধ্যেও আমরা সাধ্যমতো ওদের মা-বাবার আভাব পূরণের চেষ্টা করি।’
শুধু মিম-আলিফ নয়, প্রতিষ্ঠার পর থেকে তাদের মতো আরো প্রায় তিন হাজার দুস্থ নারী-শিশু ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারের সেবা পেয়েছে। ডিসি শামিমা বেগম বলেন, মিম ও আলিফের মা নাজমা বেগম গত ২ জুলাই সন্ধ্যায় পেটে ও বুকে প্রচণ্ড ব্যথা নিয়ে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে আসেন। এরপর হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের ১০৯ নম্বর ওয়ার্ডের ৩২ নম্বর বেডে এক মাস ১২ দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর গত ৪ আগস্ট মারা যান। হাসপাতালের রেজিস্ট্রেশন নম্বরে নাজমার ঠিকানা উল্লেখ করা হয় ‘অজ্ঞাত’। তাৎক্ষণিকভাবে তাঁর কোনো স্বজন না পাওয়ায় মরদেহ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে রাখা হয়। কয়েক মাস আগেই নাজমার স্বামী শাহজাহান সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান। স্বামীর মৃত্যুর পর নাজমা ঢাকায় গৃহপরিচারিকার কাজ করে দুই সন্তানের দেখভাল করতেন। কিন্তু তিনিও চলে গেলে শিশু দুটিকে দেখাশোনার আর কেউ থাকে না। এরপর শাহবাগ থানার মাধ্যমে তাদের ঠিকানা হয় তেজগাঁওয়ের ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে।
পুলিশ জানায়, ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে মাতৃস্নেহ দিয়েই শিশু দুটিকে আগলে রেখেছেন নারী পুলিশ সদস্যরা। তাঁরা শিশু দুটিকে খাওয়ানো, ঘুম পাড়ানো, গোসল করানোসহ সব আবদার পূরণে সাধ্যমতো চেষ্টা করেন। পাশাপাশি চলছে বৈধ অভিভাবক বা নিকটাত্মীয়ের খোঁজ। নিঃসন্তান অনেক দম্পতি শিশু দুটিকে নিতে আগ্রহ দেখিয়েছে। তবে যত দিন অন্য ব্যবস্থা না হচ্ছে তত দিন মিম ও আলিফ ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারেই থাকবে।
ডিসি শামীমা বেগম বলেন, অনেক খোঁজ করার পর নাজমার এক সৎভাইয়ের খোঁজ মেলে। কিন্তু তিনি মিম ও আলিফের দেখভালের দায়িত্ব নিতে চাচ্ছেন না। তাঁর তথ্য মতে, নাজমার আসল নাম আসমা আক্তার। গ্রামের বাড়ি যশোর জেলার শরীয়তপুরের রাঙ্গাপুর। শ্বশুরবাড়ি রংপুরে। মিম ও আলিফের বৈধ অভিভাবক বা স্বজন কেউ থাকলে তাকে জরুরি ভিত্তিতে উপযুক্ত প্রমাণসহ ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে যোগাযোগ করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০০৯ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি প্রতিষ্ঠার পর থেকে মিম ও আলিফেরে মতো আরো দুই হাজার ৭৯০ জন আশ্রয়হীন নারী ও শিশুর সেবা দেওয়া হয়েছে ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে। মূলত এতিম ও কুড়িয়ে পাওয়া শিশু, কিশোরী, গৃহপরিচারিকাসহ আশ্রয়হীন নারী-শিশুদের ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে দেখভাল করা হয়। পরে পরিবারের সদ্যস্যদের খুঁজে বের করে তাদের জিম্মায় দেওয়া হয়। যাদের পরিবারের সন্ধান মেলে না, তাদের আদালতের মাধ্যমে সমাজের বিভিন্ন সংস্থা ও ব্যক্তির জিম্মায় দেখভালের দায়িত্ব দেওয়া হয়।
ডিসি শামীমা বেগম বলেন, বর্তমানে ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে ৬৮ জন নারী পুলিশ সদস্য রয়েছেন। তবে বাড়তি জনবলের প্রয়োজন হলে প্রেষণে আরো সদস্য এনে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া হয়। দুস্থদের কাপড়চোপড়, খাবার ও চিকিৎসার ব্যবস্থাও পুলিশকেই করতে হয়।
সুত্র- কালের কণ্ঠ অনলাইন