জুয়েলারী জগতে আলোচনার কেদ্রবিন্দুতে “ডায়মন্ড সিটি” কেবিন ক্রূ/ ফ্লাইট স্টুয়ার্ড নেবে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স (ছেলেমেয়ে উভয়ই) বিনা অভিজ্ঞতায় “কেবিন ক্রু” পদে লোক নিবে নভো এয়ারলাইন্স, যোগ্যতা HSC, আবেদন করতে পারবে ছেলে মেয়ে উভয়ই। অচেনা নায়ক ! Unseen Hero !! কেবিন ক্রু নিয়োগ দেবে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স ,যোগ্যতা উচ্চ মাধ্যমিক ,আবেদন করতে পারবে ছেলে মেয়ে উভয়ই বিনা অভিজ্ঞতায় “কেবিন ক্রু” পদে চাকরি, যোগ্যতা HSC পাশ, বেতন ৮০০০০ টাকা ইউএস-বাংলার বহরে নতুন বোয়িং যুক্ত ‘চাকরির হতাশায়’ ঢাবি গ্রাজুয়েটের আত্মহত্যা ! নতুন ৫ টিভি চ্যানেলের অনুমোদন , মিডিয়াতে কর্মসংস্থানের ব্যাপক সুযোগ জবস এওয়ানের এক যুগ পূর্তি
ঢাকা, মে ১৯, ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, স্থানীয় সময়: ০৬:৪০:০৯

এক রাগে ৪০ বছর!

| ১৬ ভাদ্র ১৪২১ | Sunday, August 31, 2014

রাগের মাথায় বাড়ি ছেড়েছিলেন বরগুনার আবদুস সাত্তার সিকদার। ফিরলেন ৪০ বছর পর। পড়ুন বিস্তারিত>>

Photo: এক রাগে ৪০ বছর! ▬▬>>মূল :: sangbadkantha.com/275  রাগের মাথায় বাড়ি ছেড়েছিলেন বরগুনার আবদুস সাত্তার সিকদার। ফিরলেন ৪০ বছর পর। পড়ুন বিস্তারিত>>  ১৪ আগস্ট ২০১৪। মধ্যদুপুর। বরগুনা জেলার বামনা উপজেলার রামনা বাজার। বাজারের অধিকাংশ দোকানের ঝাঁপই বন্ধ হয়ে গেছে। নিরুত্তাপ একটা দুপুর। মোড়ের একটা চায়ের দোকানের সামনে খানিকটা জটলা। কৃষক সিদ্দিক মিয়া উঁকি দেন জটলায়। দেখেন, ষাটোর্ধ্ব এক লোক কাঁধের গামছা দিয়ে মুখ মুছছেন। তাঁর মুখের ওপর আগ্রহভরা অনেকগুলো চোখ। লোকটা মুখ মুছে বললেন, ‘আমার নাম আবদুস সাত্তার সিকদার। ৪০ বছর পর দ্যাশে ফিরলাম।’ জটলার একজন রসিকতা করেন, ‘না ফেরলেই পারতেন! তো আমনে কোন বাড়ির? কোন দ্যাশে গেছিলেন?’ প্রবীণ মৃদু হাসেন, ‘সিকদারবাড়ির ছোট পোলা আমি। বাপের নাম সবেদ আলী সিকদার। পুরোনো ঠিকানায় নতুন পথেগেরাম অযোধ্যা।’ নামধাম জানার পর সিদ্দিকের মনে পড়ে গেল হামিদ সিকদারের কথা। এই তো কদিন আগেও হারিয়ে যাওয়া ছোট ভাইয়ের কথা বলতে বলতে চোখের পানি ফেলছিলেন লোকটা। এই সাত্তারই কি তাঁর হারিয়ে যাওয়া ভাই? নিরুত্তাপ একটা দুপুর মুহূর্তেই বদলে গেল। চারপাশে ছড়িয়ে পড়ল—‘ঘটনা শোনছ, সিকদার বাড়ির ছোট পোলা ৪০ বছর পর দ্যাশে ফেরছে!’  তুমি আর নেই সে তুমি কেউ বলে হাজেরা বেগমের বয়স ১০০ বছর, কারও দাবি ৯৫। হাজেরার নিজের ধারণা ৮০ হবে। সে যা-ই হোক, তাঁর চোখও বুড়ো হয়ে গেছে। কে যেন এসে বলল, ‘আমনের ছোড বাই আবদুস সত্তার ফিইরা আইছে!’ বুড়ো চোখে খেলে গেল উত্তেজনার ঝিলিক। হাজেরা অনেকক্ষণ চুপ মেরে রইলেন, বুঝলেন না বার্তাবাহক কী বলতে চাইছে। কিছুক্ষণ বাদেই এক শুভ্র শ্মশ্রুমণ্ডিত লোক এসে দাঁড়ালেন চোখের সামনে। বললেন, ‘বুবু, কেমন আছ?’ ঘোলা চোখে অনেকক্ষণ তাকিয়ে রইলেন অচেনা মানুষটির মুখের দিকে। তারপর মুখ খুলেলন, ‘তুই যে সত্তার, তার পরমান কী? তর ডাইন পায়ের পোড়া দাগটা দেহা দেহি।’ ছেলেবেলায় ভাতের মাড় পরে ডান পা পুড়ে গেছিল সাত্তারের। নিজের পরিচয় প্রমাণের জন্য দাগটা দেখালেন বোনকে। দেখে হাজেরা যাকে বলে ‘থ’। ‘বাইরে! অ্যাদ্দিন তুই কই আছিলি, বাই!’ বলেই জড়িয়ে ধরলেন ভাই সাত্তারকে।  আপনজনের কাছে ফেরা: বড় ভাই হামিদ সিকদার (বাঁয়ে) ও ভাতিজাদের সঙ্গে আবদুস সাত্তার সিকদারএত দিন কোথায় ছিলেন? আসলেই তো, এই বছর চল্লিশেক সময় কোথায় ছিলেন সাত্তার? প্রশ্ন শুনে অনেকক্ষণ তাকিয়ে থাকেন। আস্তে-ধীরে বলেন, ‘আমি যেইসব জায়গায় গেছি, সেইসব জায়গার নামও শোনেন নাই!’ নাম না-শোনা জায়গাগুলো কী কী? সাত্তারের প্রশ্নের উত্তর দেন তাঁর অগ্রজ হামিদ সিকদার, ‘মুক্তিযুদ্ধের দুই বছর বাদে হ্যায় ঘর ছাড়ছিল। তখন হ্যার বয়স আছিল ২০ বছরের মতন। পেরথমেই গেছিল বাগেরহাটের খানজাহান আলীর মাজারে। হেইহান থেইকা খুলনা। হেরপর চট্টগ্রাম আর ঢাকার মাজারে মাজারে আছিল ৮-১০ বছর! কত যে খুঁজছি ওরে! এই ১৫ বছর আগেও খবর পাইছিলাম, হ্যায় নাকি চট্টগ্রামে আইছে। ছুইটা গেছি, দেখি যে নাই! বড় দুইটা ভাই মইরা গেছে। অ্যায় তো থাইকাও আছিল না। কী যে কষ্টে আছিলাম অ্যাদ্দিন!’  কিন্তু ঘর ছেড়েছিলেন কেন সাত্তার? প্রায় সমবয়সী ভাস্তে আনোয়ার সিকদারের মুখের দিকে তাকিয়ে ইঙ্গিতপূর্ণ হাসি দেন, আমাদের দিকে তাকিয়ে বলেন, ‘ওই যে বড় ভাবির লগে কথা-কাটাকাটি হইছিলে।’ ভাস্তে আনোয়ার ফোড়ন কাটেন, ‘হ্যার আবার ছোটকাল থোন রাগ একটু বেশি!’ একদম বিনা বাক্যব্যয়ে সেটা মেনে নেন সাত্তার, ‘ভাবি আসলে তেমন কিছুই কয় নাই। তার পরও রাগ উইঠে গেল। চার ভাই, এক বইনের মধ্যে ছোট তো, রাগ বেশি আছিল। কথা-কাটাকাটির পর মনে হইলে, চোখ যেদিকে যায় সেদিকে চইলে যামু। দ্যাশের মধ্যে ৮-১০টা মাজারে মাজারে ঘোরাঘুরির পর একদিন কী জানি হইলে মাথায়, বাড়িঘর, মা, ভাই-বইনের কথা ভুইলে গেলাম! কোনো মেমোরিই মাথায় কাজ করে নাই।’  তার কিছুদিন পরই নাকি সীমান্ত পেরিয়ে ভারতের আজমির শরিফে চলে যান সাত্তার। সেখানে মাজার পরিচর্যার কাজ করেই হতো পেট-পিঠের সংস্থান। এক ফাঁকে নাকি পাকিস্তানেও গিয়েছিলেন। তাঁর ভাষায়, ‘ওই দ্যাশে গিয়া পাহাড়ে উঠছি পরে চীন দ্যাশের পেরাচির দেখছি। ১২টা ঘোড়া আহে, আর ১২টা ঘোড়া যায় ওই পেরাচিরের উরপে দিয়া।’ এমন অনেক বিচিত্র গল্পই জমা হয়েছে সাত্তারের ঝুলিতে। কোনোটা বিশ্বাস হয়, কোনোটা হয় না। তবে তাঁর সব গল্পের অনুরাগী ভক্তের একটা দল আছে সিকদারবাড়িতে। একদম চার থেকে ১২ বছর বয়সী আট–নয়টা নাতি-নাতনি হলো সাত্তারের দেশ-বিদেশের গল্পের শ্রোতা। বেশ বোঝা গেল, হঠাৎ করে এতগুলো নাতি-নাতকুর পেয়ে গল্পের ঝুলি খুলে বসেছেন। ‘আল্লাহর দুইনার এতকিছুর মইধ্যে তাজমহলটারে বেশি মনে ধরছে! সেকি সৌন্দর্য! সারা দিন না খায়া থাকলেও খালি দ্যাখতেই মন চায়।’ বাড়ির সামনের ধানখেত নয়, যেন স্বপ্নটি শাহজাহানের তাজমহলের দিকে তাকিয়ে কথাগুলো বলছিলেন সাত্তার।  সব পাখি ঘরে ফেরে এত দিন যে ঘর ছেড়ে রইলেন, বাড়ির সবাইকে দেখতে মন চায়নি? সাত্তারের ঠোঁটের আগায় উত্তর প্রস্তুত, ‘মন চাইলেই তো বিপদ! মন চাইলেও অন্য বাজারে মনটারে আটকায় রাখতাম। চট্টগেরামে থাকতে বিয়া করছিলাম, বেশি দিন টিকে নাই। সন্তানাদিও নাই। তবে এই বাজারের তো অনেকেই এহন আর নাই!’ ছোটদের দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, ‘নতুন নতুন মানুষ আইছে। এগোরে নিয়া বাকি জীবনটা কাটাইতে চাই।’ পাশ থেকে বন্ধুতুল্য ভাস্তে আনোয়ার মনে করিয়ে দেন, ‘আমরাও এগোর মতন আছিলাম! বিষখালী নদীতে মাছ ধরতে যাইতাম। স্কুলে পড়ছিলাম কেলাস থিরি না ফোর পর্যন্ত। সারা দিন ফুটবল খ্যালতাম।’ আমাদের দিকে তাকিয়ে চাচার গুণকীর্তন করেন, ‘হ্যায় আবার খুব নামকরা ফুটবলার আছিল।’  সাত্তার অবশ্য সেটা মানতে নারাজ। নামকরা ঠিক নয়, মোটামুটি ভালোই ফুটবল খেলতেন বলে মনে করেন। বাড়ি ফিরে মাঠেঘাটে ঘুরে এসেছেন এ কদিনে। সবকিছু ঠিকঠাক মনে আছে তাঁর। বড় ভাবির সঙ্গে ঝগড়াটা মনে রেখেছেন কি? ইতস্তত করেন সাত্তার, ‘না, মনে রাখুম ক্যান! ভাবি জানি কার বাড়ি গ্যাছে ঘুরতে। ফিরা আইলে দেখা কইরা আমু ভাবছি। এই দুনিয়া আর কয় দিনের! ঝগড়াঝাঁটি, রাগ-গোস্বা—সব পাগলের কাম!’   সহযোগিতা: এম জসীম উদ্দীন ও মো. রফিক ছবি: কবীর শাহরীয়ার (প্রথম আলো )

১৪ আগস্ট ২০১৪। মধ্যদুপুর। বরগুনা জেলার বামনা উপজেলার রামনা বাজার। বাজারের অধিকাংশ দোকানের ঝাঁপই বন্ধ হয়ে গেছে। নিরুত্তাপ একটা দুপুর। মোড়ের একটা চায়ের দোকানের সামনে খানিকটা জটলা। কৃষক সিদ্দিক মিয়া উঁকি দেন জটলায়। দেখেন, ষাটোর্ধ্ব এক লোক কাঁধের গামছা দিয়ে মুখ মুছছেন। তাঁর মুখের ওপর আগ্রহভরা অনেকগুলো চোখ। লোকটা মুখ মুছে বললেন, ‘আমার নাম আবদুস সাত্তার সিকদার। ৪০ বছর পর দ্যাশে ফিরলাম।’ জটলার একজন রসিকতা করেন, ‘না ফেরলেই পারতেন! তো আমনে কোন বাড়ির? কোন দ্যাশে গেছিলেন?’ প্রবীণ মৃদু হাসেন, ‘সিকদারবাড়ির ছোট পোলা আমি। বাপের নাম সবেদ আলী সিকদার। পুরোনো ঠিকানায় নতুন পথেগেরাম অযোধ্যা।’ নামধাম জানার পর সিদ্দিকের মনে পড়ে গেল হামিদ সিকদারের কথা। এই তো কদিন আগেও হারিয়ে যাওয়া ছোট ভাইয়ের কথা বলতে বলতে চোখের পানি ফেলছিলেন লোকটা। এই সাত্তারই কি তাঁর হারিয়ে যাওয়া ভাই? নিরুত্তাপ একটা দুপুর মুহূর্তেই বদলে গেল। চারপাশে ছড়িয়ে পড়ল—‘ঘটনা শোনছ, সিকদার বাড়ির ছোট পোলা ৪০ বছর পর দ্যাশে ফেরছে!’

তুমি আর নেই সে তুমি

কেউ বলে হাজেরা বেগমের বয়স ১০০ বছর, কারও দাবি ৯৫। হাজেরার নিজের ধারণা ৮০ হবে। সে যা-ই হোক, তাঁর চোখও বুড়ো হয়ে গেছে। কে যেন এসে বলল, ‘আমনের ছোড বাই আবদুস সত্তার ফিইরা আইছে!’ বুড়ো চোখে খেলে গেল উত্তেজনার ঝিলিক। হাজেরা অনেকক্ষণ চুপ মেরে রইলেন, বুঝলেন না বার্তাবাহক কী বলতে চাইছে। কিছুক্ষণ বাদেই এক শুভ্র শ্মশ্রুমণ্ডিত লোক এসে দাঁড়ালেন চোখের সামনে। বললেন, ‘বুবু, কেমন আছ?’ ঘোলা চোখে অনেকক্ষণ তাকিয়ে রইলেন অচেনা মানুষটির মুখের দিকে। তারপর মুখ খুলেলন, ‘তুই যে সত্তার, তার পরমান কী? তর ডাইন পায়ের পোড়া দাগটা দেহা দেহি।’ ছেলেবেলায় ভাতের মাড় পরে ডান পা পুড়ে গেছিল সাত্তারের। নিজের পরিচয় প্রমাণের জন্য দাগটা দেখালেন বোনকে। দেখে হাজেরা যাকে বলে ‘থ’। ‘বাইরে! অ্যাদ্দিন তুই কই আছিলি, বাই!’ বলেই জড়িয়ে ধরলেন ভাই সাত্তারকে।

আপনজনের কাছে ফেরা: বড় ভাই হামিদ সিকদার (বাঁয়ে) ও ভাতিজাদের সঙ্গে আবদুস সাত্তার সিকদারএত দিন কোথায় ছিলেন?

আসলেই তো, এই বছর চল্লিশেক সময় কোথায় ছিলেন সাত্তার? প্রশ্ন শুনে অনেকক্ষণ তাকিয়ে থাকেন। আস্তে-ধীরে বলেন, ‘আমি যেইসব জায়গায় গেছি, সেইসব জায়গার নামও শোনেন নাই!’ নাম না-শোনা জায়গাগুলো কী কী? সাত্তারের প্রশ্নের উত্তর দেন তাঁর অগ্রজ হামিদ সিকদার, ‘মুক্তিযুদ্ধের দুই বছর বাদে হ্যায় ঘর ছাড়ছিল। তখন হ্যার বয়স আছিল ২০ বছরের মতন। পেরথমেই গেছিল বাগেরহাটের খানজাহান আলীর মাজারে। হেইহান থেইকা খুলনা। হেরপর চট্টগ্রাম আর ঢাকার মাজারে মাজারে আছিল ৮-১০ বছর! কত যে খুঁজছি ওরে! এই ১৫ বছর আগেও খবর পাইছিলাম, হ্যায় নাকি চট্টগ্রামে আইছে। ছুইটা গেছি, দেখি যে নাই! বড় দুইটা ভাই মইরা গেছে। অ্যায় তো থাইকাও আছিল না। কী যে কষ্টে আছিলাম অ্যাদ্দিন!’

কিন্তু ঘর ছেড়েছিলেন কেন সাত্তার? প্রায় সমবয়সী ভাস্তে আনোয়ার সিকদারের মুখের দিকে তাকিয়ে ইঙ্গিতপূর্ণ হাসি দেন, আমাদের দিকে তাকিয়ে বলেন, ‘ওই যে বড় ভাবির লগে কথা-কাটাকাটি হইছিলে।’ ভাস্তে আনোয়ার ফোড়ন কাটেন, ‘হ্যার আবার ছোটকাল থোন রাগ একটু বেশি!’ একদম বিনা বাক্যব্যয়ে সেটা মেনে নেন সাত্তার, ‘ভাবি আসলে তেমন কিছুই কয় নাই। তার পরও রাগ উইঠে গেল। চার ভাই, এক বইনের মধ্যে ছোট তো, রাগ বেশি আছিল। কথা-কাটাকাটির পর মনে হইলে, চোখ যেদিকে যায় সেদিকে চইলে যামু। দ্যাশের মধ্যে ৮-১০টা মাজারে মাজারে ঘোরাঘুরির পর একদিন কী জানি হইলে মাথায়, বাড়িঘর, মা, ভাই-বইনের কথা ভুইলে গেলাম! কোনো মেমোরিই মাথায় কাজ করে নাই।’

তার কিছুদিন পরই নাকি সীমান্ত পেরিয়ে ভারতের আজমির শরিফে চলে যান সাত্তার। সেখানে মাজার পরিচর্যার কাজ করেই হতো পেট-পিঠের সংস্থান। এক ফাঁকে নাকি পাকিস্তানেও গিয়েছিলেন। তাঁর ভাষায়, ‘ওই দ্যাশে গিয়া পাহাড়ে উঠছি পরে চীন দ্যাশের পেরাচির দেখছি। ১২টা ঘোড়া আহে, আর ১২টা ঘোড়া যায় ওই পেরাচিরের উরপে দিয়া।’ এমন অনেক বিচিত্র গল্পই জমা হয়েছে সাত্তারের ঝুলিতে। কোনোটা বিশ্বাস হয়, কোনোটা হয় না। তবে তাঁর সব গল্পের অনুরাগী ভক্তের একটা দল আছে সিকদারবাড়িতে। একদম চার থেকে ১২ বছর বয়সী আট–নয়টা নাতি-নাতনি হলো সাত্তারের দেশ-বিদেশের গল্পের শ্রোতা। বেশ বোঝা গেল, হঠাৎ করে এতগুলো নাতি-নাতকুর পেয়ে গল্পের ঝুলি খুলে বসেছেন। ‘আল্লাহর দুইনার এতকিছুর মইধ্যে তাজমহলটারে বেশি মনে ধরছে! সেকি সৌন্দর্য! সারা দিন না খায়া থাকলেও খালি দ্যাখতেই মন চায়।’ বাড়ির সামনের ধানখেত নয়, যেন স্বপ্নটি শাহজাহানের তাজমহলের দিকে তাকিয়ে কথাগুলো বলছিলেন সাত্তার।

সব পাখি ঘরে ফেরে

এত দিন যে ঘর ছেড়ে রইলেন, বাড়ির সবাইকে দেখতে মন চায়নি? সাত্তারের ঠোঁটের আগায় উত্তর প্রস্তুত, ‘মন চাইলেই তো বিপদ! মন চাইলেও অন্য বাজারে মনটারে আটকায় রাখতাম। চট্টগেরামে থাকতে বিয়া করছিলাম, বেশি দিন টিকে নাই। সন্তানাদিও নাই। তবে এই বাজারের তো অনেকেই এহন আর নাই!’ ছোটদের দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, ‘নতুন নতুন মানুষ আইছে। এগোরে নিয়া বাকি জীবনটা কাটাইতে চাই।’ পাশ থেকে বন্ধুতুল্য ভাস্তে আনোয়ার মনে করিয়ে দেন, ‘আমরাও এগোর মতন আছিলাম! বিষখালী নদীতে মাছ ধরতে যাইতাম। স্কুলে পড়ছিলাম কেলাস থিরি না ফোর পর্যন্ত। সারা দিন ফুটবল খ্যালতাম।’ আমাদের দিকে তাকিয়ে চাচার গুণকীর্তন করেন, ‘হ্যায় আবার খুব নামকরা ফুটবলার আছিল।’

সাত্তার অবশ্য সেটা মানতে নারাজ। নামকরা ঠিক নয়, মোটামুটি ভালোই ফুটবল খেলতেন বলে মনে করেন। বাড়ি ফিরে মাঠেঘাটে ঘুরে এসেছেন এ কদিনে। সবকিছু ঠিকঠাক মনে আছে তাঁর। বড় ভাবির সঙ্গে ঝগড়াটা মনে রেখেছেন কি? ইতস্তত করেন সাত্তার, ‘না, মনে রাখুম ক্যান! ভাবি জানি কার বাড়ি গ্যাছে ঘুরতে। ফিরা আইলে দেখা কইরা আমু ভাবছি। এই দুনিয়া আর কয় দিনের! ঝগড়াঝাঁটি, রাগ-গোস্বা—সব পাগলের কাম!’

সহযোগিতা: এম জসীম উদ্দীন ও মো. রফিক

ছবি: কবীর শাহরীয়ার (প্রথম আলো )