ঈদের আগে বেতন ও বোনাসের দাবিতে অনশনরত তোবা গ্রুপের শ্রমিকেরা অভিযোগ করেছিলেন, গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) দেলোয়ার হোসেনকে জামিনে মুক্ত করার জন্য মালিকপক্ষ তাঁদের জিম্মি করেছে। পেছন থেকে কলকাঠি নাড়ছে বিজিএমইএ।
বিজিএমইএ সে সময় এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছিল, দেলোয়ারকে মুক্ত করার বিষয়ে তারা কোনো তদবির করছে না। তবে অনুসন্ধানে দেখা গেছে, দেলোয়ারকে দ্রুত জামিনে মুক্ত করার জন্য পদক্ষেপ নিতে শ্রম মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করে চিঠি দিয়েছিল বিজিএমইএ। ওই চিঠিতে দেলোয়ারের জামিনের পক্ষে নানা যুক্তি তুলে ধরা হয়েছিল। চিঠির একটি কপি প্রথম আলোর হাতে এসেছে। শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নুকে চিঠিটি পাঠিয়েছিলেন বিজিএমইএর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এস এম মান্নান। গত ৩০ জুন ওই চিঠি মন্ত্রণালয় রিসিভ করে।চিঠিতে বলা হয়েছিল, দেলোয়ার হোসেনের জামিনের ব্যবস্থা করা হলে তোবা গ্রুপের পাঁচ হাজার শ্রমিক-কর্মচারীর বিগত মাসের বেতন-ভাতা, ঈদের বোনাস এবং শ্রমিকদের চাকরির নিশ্চয়তা দেওয়া যাবে। অন্যথায় সমগ্র পোশাকশিল্পে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
চিঠিতে বলা হয়, তোবা গ্রুপের সাতটি কারখানার মধ্যে তাজরীন ফ্যাশনস ছাড়াও আরও ছয়টি কারখানা উত্পাদনমুখী রয়েছে; যার মাসিক বেতন আড়াই কোটি টাকা। মালিকের অনুপস্থিতির কারণে বায়ার কাজের অর্ডার নিচ্ছে না। ফলে শ্রমিকেরা বেতন-ভাতার জন্য অবরোধসহ বিজিএমইএ কার্যালয় ঘেরাও করছেন।
বিজিএমইএ জানায়, শ্রমিকদের দাবির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, দেলোয়ার হোসেনের মামলা বিচারাধীন রেখে তাঁকে জামিনের ব্যবস্থা করে তাজরীনের ফ্যাশনসের ঘটনার জন্য প্রকৃত অপরাধীকে শনাক্ত করা।
২০১২ সালের ২৪ নভেম্বর দিবাগত রাতে আশুলিয়ার নিশ্চিন্তপুরে তোবা গ্রুপের প্রতিষ্ঠান তাজরীন ফ্যাশনসে অগ্নিকাণ্ড ঘটে। এতে ১১১ জন শ্রমিক অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা যান। এ ঘটনায় করা মামলায় জামিন নিতে গেলে আদালত গত ৯ ফেব্রুয়ারি দেলোয়ার হোসেনকে কারাগারে পাঠানো হয়। পরে হাইকোর্ট থেকে গত ২৪ জুলাই জামিন পান দেলোয়ার। প্রায় দেড় মাস শেষ, কিন্তু এখন পর্যন্ত শ্রমিকদের জন্য তেমন কিছুই করেননি দেলোয়ার হোসেন। উল্টো শ্রম মন্ত্রণালয়কে তিনি জানিয়েছেন, তাঁর কাছে টাকা নেই, তাই কারখানা বন্ধ করে দেবেন। তাজরীন ফ্যাশনস তোবা গ্রুপের একটি প্রতিষ্ঠান।
ঈদের আগের তোবা গ্রুপের এক হাজার ৬০০ শ্রমিক অনশন শুরু করেন। সে সময় একাধিক শ্রমিক অভিযোগ করেন, দেলোয়ারকে কারাগার থেকে বের করার জন্যই মালিকপক্ষ শ্রমিকদের জিম্মি করেছে।
অনশনে থাকা অন্তত ১০ জন শ্রমিক এই প্রতিবেদককে এমন তথ্য দিয়ে বলেছিলেন, মালিকপক্ষের লোকজন, বিজিএমইএর একজন শীর্ষস্থানীয় নেতা ও পুলিশের দুই কর্মকর্তার প্ররোচনায় গত মাসে তাঁরা রাস্তায় নামেন। তখন শ্রমিকেরা দাবি করেন, ‘বেতন দাও, না হলে মালিককে ফেরত দাও।’
বিজিএমইএর এক সংবাদ সম্মেলনে দেলোয়ার হোসেনের জামিন করানোর জন্য শ্রমিকদের জিম্মি করা হচ্ছে কি না এমন প্রশ্ন করা হয়েছিল। বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি টিপু মুন্সি সে সময় বলেছিলেন, ‘উনি (দেলোয়ার) বের হলেই টাকা পাওয়া যাবে, আমরা কিন্তু সেটা বলছি না। আমরা বলছি ব্যাংক একটু সহায়তা করলেই টাকা পাওয়া যাবে। রপ্তানির কার্যাদেশের বিপরীতে ১৫ শতাংশ প্যাকিং ক্রেডিট (ঋণ) পাওয়া যায়। কিন্তু ব্যাংক থেকে পাওয়া গেছে এর অর্ধেক। পুরোটা পেলে শ্রমিকদের বেতন-বোনাস দিয়ে দেওয়া যেত।’-প্রথম আলো
সংবাদকন্ঠ.কম |
ফোন: ৮৮ ০২ ৮১৪৪৪৬০, ৮১৪২২৮০ , নিউজ রুম মোবাইল: ৮৮-০১৭১১০৭৪৬১৬
ফ্যাক্স: ৮৮ ০২ ৮১৪২২৮০ ,ইমেইল: sangbadkantha@gmail.com
ঠিকানা : ৬৮/৬৯ ,গ্রীনরোড, কনসেপ্ট টাওয়ার ,৬ষ্ঠ তলা, ঢাকা-১২০৫ ।
কপিরাইট © ২০২০ সকল স্বত্ব ® সংরক্ষিত।
© 2024 সংবাদ কণ্ঠ, All rights reserved.