এ পাতার অন্যান্য সংবাদ
সামসুল হকের কবিতা হঠাৎ চলে যাওয়া ষাটের দশকের একজন অন্যতম কবি ওমর আলীর একটি কবিতা। প্রধানমন্ত্রীর কাছে তসলিমা নাসরিনের ব্যক্তিগত চিঠি সাহিত্যে নোবেল পেলেন ফরাসি লেখক প্যাত্রিক মোদিয়ানো তসলিমা নাসরিন-এর ধারাবাহিক উপন্যাস শরম [দ্বিতীয় পর্ব] তসলিমা নাসরিন-এর ধারাবাহিক উপন্যাস শরম [প্রথম পর্ব] বিগ বস’এর ঘরে তসলিমা ? (ভিডিও ইন্টারভিউ সহ) তসলিমার ভিসার আবেদন বাতিল মোদী সরকারের তুমি বরং কুকুর পোষো - তসলিমা নাসরিনকে কবি রুদ্র রুদ্র মোহাম্মদ শহীদুল্লাহকে লেখা তসলিমা নাসরিনের সেই চিঠি‘যেটি আড়ালে আছে, সেটি আড়ালেই থাকুক’- প্রেম নিয়ে প্রেম ও দ্রোহের রাজকুমার হেলাল হাফিজ
| ৯ শ্রাবণ ১৪২১ | Thursday, July 24, 2014চিরকুমার কবি হেলাল হাফিজ বাংলা কবিতার এক রহস্যপুরুষ। লেখালেখির শুরু থেকেই তিনি আলোচিত ও সমাদৃত। দীর্ঘ কবিতাচর্চার জীবনে প্রকাশিত হয়েছে কেবল একটি কাব্যগ্রন্থ ’যে জলে আগুন জ্বলে’। প্রথম এবং এখন পর্যন্ত একমাত্র কাব্যগ্রন্থ প্রকাশের পরেই তিনি নিজেকে আড়াল করে নেন। প্রায় ২৫ বছর একধরনের স্বেচ্ছানির্বাসন দশা কাটিয়ে সম্প্রতি আবার জনসম্মুখে এসেছেন।বাংলা কবিতার রাজকুমার এই কবি ব্যক্তিজীবনে চিরকুমার। বলতে গেলে পুরোটা জীবন তিনি প্রেমিক হয়েই রয়ে গেলেন। কবি হেলাল হাফিজ শোনালেন তাঁর প্রেমের গল্প ও তাঁর প্রেমের কবিতার পেছনের কথা।
হেলাল হাফিজ
শুরুতেই জানতে চাইবো আপনার প্রথম প্রেমবিষয়ে- আপনার জীবনে প্রথম প্রেম কোন নারী?
প্রথম প্রেম বিষয়ে বলতে গেলে বলতে হয়, সেটি ছিল অসামঞ্জস্য বা অসমবয়সী প্রেম। আবার অন্যদিক বিচারে হয়ত এটাকে প্রেম বলাও যায় না।
প্রেম বললে দোষ কোথায়?
প্রেম বলতে চাই না এজন্য যে, আমি যাকে ভালোবেসেছিলাম, সে ছিল আমার চেয়ে প্রায় ১০ থেকে ১১ বছরের বড়। সম্পর্কে সে আমার মামাতো বোন। আর তাছাড়া, আমি তাকে আমার ভালো লাগার কথা কখনোই জানাতে পারিনি। কিন্তুু এটা সত্যি, তাকে আমি ভালোবেসেছিলাম। কৈশোরত্তীর্ণ সময়ে আমি তার প্রেমে পড়েছি, এটা তাকে বলাও যায়নি। অথচ, তার প্রতি আমার টান ছিল দুর্বার। একধরনের প্রেমানুভূতি সৃষ্টি হয়েছিল আমার ভিতরে। তবে সেই প্রেমটি ছিল সম্পূর্ণ কামহীন প্রেম।
তাহলে বলা যায়, প্রথম প্রেমেই ছ্যাকা!
তা বলতে পারো। হা! হা! হা!
ফের আবার কবে প্রেমে পড়লেন?
আমি মনে করি, প্রথম প্রেম কিংবা শেষ প্রেম বলে কিছু নেই। যখন কেউ প্রেমে পড়ে তখন তার কাছে সেটিই মুখ্য হয়ে ওঠে। তখন আগের প্রেমটি তার কাছে তেমন গুরুত্ব পায় না। তাই মানুষ নতুন নতুন প্রেমে পড়ে। আর তেমনি, কোন প্রেমটিকে আমরা শেষ প্রেম বলবো? কারণ, যেকোনো সময় যে-কেউ যে-কারো প্রেমে পড়তে পারে।
সেটা মানলাম। তবু জানতে ইচ্ছে করছে, আপনার প্রথম প্রেম থেকে দ্বিতীয় প্রেমে পড়তে কতদিন সময় লেগেছিল?
আমি আবারও বলছি, আপনি যাকে আমার প্রথম প্রেম বলছেন, সেটি ছিল যৌবনে পদার্পণের ঠিক আগ-মুহূর্তে। তাই তখনকার প্রেমটি ছিল সরল ও নিস্পাপ। তাই, ঐ প্রেমটি থেকে আর একটা প্রেমে পড়তে খানিক সময় তো লাগবেই! বলতে পারেন, একধরনের ভয় বা দ্বিধা আমাকে পেয়ে বসেছিল। তাই পরবর্তীকালে প্রেমে পড়তে গিয়ে আমি অনেক ভেবেছি। কখনো মনে হয়েছে, এসব অকারণ ভাবনা। আবার কখনো মনে হয়েছে, যা হবার তাই হবে! যখন মাধ্যমিক পেরিয়ে উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তি হলাম, তারপরেই আমি আবার প্রেমে পড়লাম। এবারের প্রেমটিকে সত্যিকারের প্রেম বলতে পারেন আপনি। এখানে সত্যিকারের প্রেম বলতে চাচ্ছি এই জন্য যে, যে মেয়েটিকে আমার ভালো লেগেছিল তাকে আমি আমার মনের কথা জানাতে পেরেছিলাম।
আপনার ঐ প্রেমটি কতদূর গড়িয়েছিল?
এ-বিষয়ে বেশি কিছু বলবো না। তবে এটুকু বলছি, আমার কোনো প্রেমই শেষ পরিণতি পায়নি। এটিও পায়নি।
এবার আপনার কবিতায় আসা। আপনার এখন পর্যন্ত প্রকাশিত মৌলিক কাব্যগ্রন্থ যে জলে আগুন জ্বলে; মোট কবিতা সংখ্যা ৫৬। এরমধ্যে বেশ কটি কবিতা তুমুল জনপ্রিয়তা বা পাঠকপ্রিয়তা পেয়েছে। আপনার কবিতায় প্রেম এসেছে এক ভিন্নমাত্রা নিয়ে। এ-বিষয়ে কিছু বলেন…
নিজের কবিতা বিষয়ে নিজে কীভাবে বলি! তবে আমার যেটি মনে হয়েছে, কবিতার পাঠকেরা আমার কবিতাতে এমন কিছু পেয়েছে, যা তাদেরকে প্রেমে পড়তে গিয়ে, প্রেমে প্রত্যাখ্যাত হয়ে কিংবা প্রেমে মজে আমার কবিতার কাছে নিয়ে এসেছে। এমনও হয়েছে, লোকজন এসে আমাকে জানিয়েছে, আমার কবিতাটি সে তার প্রিয়তমাকে লিখে দিয়ে প্রেম নিবেদন করেছে। আবার কেউ কেউ এও বলেছে, প্রেমে প্রত্যাখ্যাত হয়ে সে আমার কবিতায় আশ্রয় নিয়েছে। তাই হয়ত বিভিন্ন শ্রেণির পাঠকেরা তাদের নিজেদের মতো করে আমার কবিতাকে বাঁচিয়ে রেখেছে।
আপনার কবিতায় যে নারী চরিত্রগুলো এসেছে সে-বিষয়ে কিছু বলেন….
এ-বিষয়ে বিস্তারিত বলাটা সঙ্গত কারণেই নিরাপদ নয় বলে আম মনে করি। কেননা, আমার কবিতা আমার জীবনের বাইরে তো কিছু নয়! যে সকল নারীরা আমার জীবনে নানাভাবে রেখাপাত এঁকে গিয়েছে, সে সকল নারীরাই নানা আঙ্গিকে আমার কবিতায় স্থান করে নিয়েছে। তাদের কেউ কেউ এখনো বিদ্যমান। তাই তাদের কথা বলে তাদেরকে অস্বস্তিতে ফেলতে চাই না। তাদের কথা বলাটা আমার জন্যও যেমন সমীচীন হবে না, তেমনি তাদের জন্যও সুখকর হবে না। যেটি আড়ালে আছে, সেটি আড়ালেই থাকুক।
আপনার প্রেমের কবিতায় প্রেয়সী বা প্রেমাস্পদের প্রতি একধরনের জেদ এবং পাশাপাশি নির্ভরশীলতা বা আশ্রয়ও লক্ষ্য করা যায়। কবিতায় এই বিষয়গুলো কি ব্যক্তিগত প্রেমের অভিজ্ঞতার কারণেই?
দেখো, প্রেয়সীর প্রতি একটা কোমল ও অনুরাগের জেদ হয়ত প্রত্যেক প্রেমিকমাত্রই পোষণ করেন। অন্যদিকে প্রেমের কাছে বা প্রেমিকার মাঝে একটা আশ্রয় তো আশা করাই যায়!
নিশ্চয়। আপনার কবিতায় ঐ বিষয়গুলো নিয়েই শুনতে চাচ্ছিলাম।
আমার কবিতায় এগুলো হয়ত এসেছে। তবে মূলকথা হচ্ছে, কবিতা সম্পর্কে বলা একটু কঠিন। কবিতা লেখা হয় বিশেষ মুহূর্তে। আবার কখনো মনে হয় কবিতা আমাকে দিয়ে লিখিয়ে নিয়েছে বলেই আমি লিখতে পেরেছি। তবে ব্যক্তিজীবনের বাইরে গিয়ে কোনো লেখাই আমি লিখিনি। আমার সময়, দেশ, দেশের রাজনীতি, রাজনৈতিক নেতা থেকে শুরু করে প্রেয়সী সকলেই কোনো না কোনোভাবে আমার লেখায় জায়গা করে নিয়েছে।
আপনার ‘ফেরীঅলা’ শীর্ষক কবিতায় আপনি কষ্ট ফেরী করার কথা বলেছেন। এই কবিতাটি সম্ভবত আমাদের দেশে বহুল প্রচারিত কবিতা, আবৃত্তির ক্যাসেটে বাজানো কবিতার মধ্যে একটি। আপনি নিজেকে কষ্টের ফেরীঅলা হিসেবে কবে থেকে ভাবা শুরু করলেন?
তোমার প্রশ্নের জবাব দেয়ার আগে খানিক বলে নিচ্ছি : আমি তো গত প্রায় ২৫ বছরেরও বেশি সময় একধরনের স্বেচ্ছানির্বাসনের মতো ছিলাম। তখন বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন মানুষের কাছে এই কবিতাটির কথা শুনেছি। বিভিন্ন জায়গায় মাইকে বা অডিও প্লেয়ারে আবৃত্তি শুনেছি। তখন আমার মনে হয়েছে, লোকজন যেভাবে এ-কবিতাটি তাদের ভেতর থেকে উচ্চারণ করে চলেছে, তাতে করে আমার মনে হয়েছে প্রত্যেকেই যেন একেকজন কষ্টের ফেরীঅলা! এই যে, আমার একক কষ্টানুভূতিটুকু সকলের কাছে পৌঁছে যাওয়া এটাই প্রাপ্তি। আর আপনার কথার জবাবে বলছি, আসলে শৈশব থেকেই আমি ভেতরে ভেতরে দুঃখী মানুষ। আমার আম্মার মৃত্যু হয়েছে আমার তিন বছর বয়সে। যেহেতু তখনকার কোনো স্মৃতি ছাড়াই আমি বেড়ে উঠেছি। তাই আসলে তখন থেকেই একটা দুঃখানুভূতি আমার ভেতরে ছিল। আর কবিতায় সেটিই নানামাত্রায় হাজির হয়েছে।
(অনন্যা থেকে সংকলিত )