এ পাতার অন্যান্য সংবাদ
জুয়েলারী জগতে আলোচনার কেদ্রবিন্দুতে “ডায়মন্ড সিটি” বাংলাদেশ বিমানে নিয়োগ পাচ্ছে ৩০০ নতুন কেবিন ক্রূ , ছেলেমেয়ে উভয়ই ইউএস-বাংলার বহরে নতুন বোয়িং যুক্ত ‘চাকরির হতাশায়’ ঢাবি গ্রাজুয়েটের আত্মহত্যা ! এক যুগে পদার্পন করলো জবস এওয়ান ডটকম তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতুর নির্মাণ শুরু মে মাসে: সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বান্দরবানে বাস খাদে, নিহত ৭ মোবাইল সেটও করতে হবে নিবন্ধন বিজয় দিবসে দীর্ঘ দিন পর স্বতঃস্ফূর্তভাবে রাজপথে বিএনপি জাতীয় পরিচয়পত্র ছাড়া নিবন্ধিত সিমের মেয়াদ ৬ মাসপ্রধানমন্ত্রীর কাছে একজন নারী সাংবাদিকের খোলা চিঠি…
| ৪ আশ্বিন ১৪২১ | Friday, September 19, 2014পত্রিকায় খবর এসেছে দুই ভাইবোন চিরশ্রী জামান (১৮) ও মো. বিন আলিম (১৫) এর অস্বাভাবিক মৃত্যু ঘটেছে। পুলিশ সন্দেহ করছে, আত্মহত্যা। নিহত ভাইবোনের মা সাংবাদিক জয়শ্রী জামানের সঙ্গে বাবা সাংবাদিক আলিমুল হকের সাত বছর আগে বিচ্ছেদ হয়।
▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬
█ উত্তরায় ভাই বোনের আত্মহত্যা : বাবা আলিমুল হকের আশংকা হত্যাকাণ্ড >>sangbadkantha.com/341
▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬
খবর মূলত এইটুকুই। কিন্তু আমরা যারা ভিতরের খবর কিছুটা হলেও রাখি তারা জানি খবরের বিস্তৃতি আরও অনেক দূরপর্যন্ত। ভাঙা পরিবারে বেড়ে উঠা ছেলেমেয়ে দুটো হতাশাগ্রস্থ ছিল নানা কারণেই। সেরকম চিহ্নও ছিল তাদের যাপিত জীবনে। আর তাদের একাকি মা লড়াই করে যাচ্ছিল একটু ভাল থাকার আশায়, বাচ্চা দুটোকে নিয়ে একটা সুস্থ জীবনযাপনের আশায়। কিন্তু অবুঝ বাচ্চা দুটো মা’কে সময় দিল না। চলে গেল। ওরা বুঝতেও চাইলো না, জীবন অনেক বড়, অথবা মায়ের লড়াইয়ে তারাও শামিল হতে পারতো। হলো না।
ব্যক্তিগতভাবে জয়শ্রী জামানের আগের স্বামী আলীমুল হককে যতটা জানি, সে আরেকটা নতুন সংসার গড়ে নিয়েছে। থাকে বিদেশে। অনেকদিন তারও কোন চাকরি ছিল না। নতুন প্রেমের কারণে দিগন্ত টিভি থেকে তার চাকরি চলে যায়। খুবই হতাশ ছিলেন তিনিও। কিন্তু যেহেতু সন্তান লালন-পালনের কোনো দায়িত্ব তাকে নিতে হয়নি, তাই জয়শ্রীর মতোন অতটা অতল গহ্বরে তাকে পড়তে হয়নি। জয়শ্রীর লেখা একটি চিঠিই তার যাবতীয় দু:খ-দুর্দশার কথা তুলে ধরে। হুবহু তুলে দেয়া হলো:
প্রধানমন্ত্রীর কাছে একজন নারী সাংবাদিকের খোলা চিঠি…
জয়শ্রী জামান : আমি জয়শ্রী জামান, পিতা রাজবাড়ী জেলার সজ্জনকান্দা নিবাসী (প্রয়াত) এ কে এম নূরুজ্জামান, মাতা (প্রয়াত ) আতিয়া জামান। বিনয়ের সঙ্গে জানাচ্ছি, আমার পিতা রাজবাড়ী নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক পদে ১৯৮৭ সাল থেকে ১৯৯৪-সাল পর্যন্ত আমরণ একজন নিঃস্বার্থ রাজনৈতিক কর্মী ছিলেন।
আমাদের চার বোনের মধ্যে আমি সর্ব কনিষ্ঠ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে অনার্স ও মাস্টার্স সমাপনের মধ্যে দিয়ে শিক্ষা জীবন শেষ করি। আমার বাকি তিন বোনের মধ্যে বড়বোন ডা. সুলতানা জামান চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাশ করেন। বর্তমানে তিনি প্রাইভেট প্র্যাকটিস করছেন। আমার বাকি দুবোনের একজন ফরিদা জামান বিশ্বভারতী শান্তিনিকেতন থেকে ইংরেজিতে অনার্স ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স করে বর্তমানে শিক্ষক ও সেজোবোন তিলোত্তমা জামান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রসায়ন বিভাগে থেকে অনার্স ও মাস্টার্স করে, তিনিও বর্তমানে শিক্ষকতা করছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরা তিন বোন যখন একই সঙ্গে পড়াশোনা করছিলাম , তখন ছিল স্বৈরাচার এরশাদ সরকারের আমল। এ সময় অসীমদা, হাবীব ভাই, বাহাদুর ভাই, আনসারী ভাইরা জঙ্গী মিছিলগুলোর সামনে থেকে শত অনুরোধ করেও আমাকে সড়াতে পারতেন না।
একই সঙ্গে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে রাজবাড়ী ঊর্মীলা সাংস্কৃতিক সংসদের সাধারণ সম্পাদক থেকে তার মাধ্যমে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সঙ্গীত আর স্বৈরাচারবিরোধী পথ নাটক ‘কাকলাশ’, ‘বর্ণচোরা’, ‘এই দেশে এই বেশে’ আমাদের বাসায় রিহার্সেল করে সাড়া শহরে কত জায়গায় কতখানে মঞ্চস্থ হয়েছে কেবলই আমারই আপ্রাণ প্রচেষ্টায় যার কিছু কথা রাজবাড়ী-১ আসনের সাংসদ কাজী কেরামত আলী থেকে শুরু করে বিশিষ্ট মহলের স্মৃতি হয়ে আছে হয়তোবা। ৯০-সালে রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দু ছিল আমাদের চিত্রা সিনেমাহলের পেছনের ‘কফি হাউজ’ খ্যাত বাসাটি। সর্বদলীয় মিটিংগুলো হতো ওই বাসায়।১৯৯৪ সালে বাবা ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে ৩ মাসের নোটিশে বিদায় নিলেন। এর পরবর্তী ঝড়ঝঞ্ঝা আজো যেনো বিভীষিকাময় ।এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ে একই বিভাগের দু বছরের সিনিয়র আলীমুল হক নামে এক ভণ্ডের সঙ্গে বিয়ে হলো, বিয়ের ১৪ বছরের মাথায় তার রাজাকার মনোবৃত্তি আর পরকীয়া প্রেমের ব্যাপারে আর আপোশ করতে না পারায় ছাড়তেই হলো তাকে।
তার কাছ থেকে পাওয়া তালাক নামায় ৬ মার্চ ২০০৮ আমি সায় না দিলেও ১৪ জুলাই ২০০৮ সালে দিগন্ত টেলিভিশনের সংবাদ পাঠিকা মাহবুবা মুস্তাফা মিলিকে সে বিয়ে করে।
আমার বিয়ের দেনমোহর ছিল ৫৫৫ (পাঁচশো পঞ্চান ) টাকা। রিক্ত হস্তে একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে চাকরি টিউশনি আর খোদার অশেষ মেহেরবানে কজন ভালো মানুষের সহায়তায় উত্তরায় একটিমাত্র ঘর ভাড়া করে আমরা তিনটি প্রাণী (আমি ও আমার এক ছেলে মুহাম্মাদ বীন আলীম ও চীরশ্রী জামান) দিন কাটাতে থাকি। খোদার অশেষ ইচ্ছেয় আমার মেয়েটি ছেঁড়া কাপড় পরেই প্রাইভেট ‘ও’ লেভেল পরীা দিয়ে এনে দিল চারটিতে স্টারসহ আট/ আটটি ‘এ’ ।
২০০৮ সালে আমার প্রথম প্রকাশনা ‘ইতিহাসের মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব’ সেই সঙ্গে আমার একক প্রচেষ্টায় মুক্তিযুদ্ধ সমন্বয় পরিষদের মুখবন্ধ ‘সময়ের উচ্চারণ’ বের করি। বাংলাবাজারের বিভিন্ন প্রকাশনায় বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক প্রবন্ধ নিবন্ধ লিখে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সমুন্নত রাখতে আত্মপ্রচেষ্টা চালিয়ে প্রায় ৩ বছর মতো সম্পাদক শ্যামল দত্তের স্নেহে দৈনিক ভোরের কাগজে কাজ করে সাংবাদিকতার ডিগ্রিটা যৎকিঞ্চিত কাজে লাগাতে শিখি। এ সময় আমার সবচেয়ে সুখের স্মৃতি ‘শোকের আগস্ট’ (২০১০-১১ সালে) আমি লিখতাম। ওই কলামে আমার নিজের নামটি প্রতিদিন দেখলেই গর্বে যেনো বুকটা ভরে যেতো।
আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়নের আশা নিয়ে ঘটনাচক্রে একদিন বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থায় আওয়ামী লীগ প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সিনিয়র নেতা আমীর হোসেন আমুর রেফারেন্স নিয়ে একটি সিভি নিয়ে দেখা করতে গেলাম তখনকার ব্যাবস্থাপনা পরিচালক ইহসানুল করিমের কাছে।
ক’দিন পর তিনি একটি এপোয়েন্টমেন্ট লেটার দিলেন। ২৫ হাজার (পঁচিশ হাজার) টাকা বেতনে খণ্ডকালীন রিপের্টার/সাব এডিটর হিসেবে। যা আগামী ১৫ ডিসেম্বর শেষ হবার কথা ছিল।এক বছরের এই চুক্তিটি অজ্ঞাত কারণে বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক আজিজুল ইসলাম ভূঁইয়া এবং ব্যাবস্থাপনা বোর্ডের চেয়ারম্যান কেড়ে নিলেন গত ১৬ জুন ২০১৩ তারিখে। এর আগে সাড়ে তিন মাস বেতন না পেয়ে চরম আর্থিক সমস্যায় পড়ে আমি ব্যবস্থাপনা পরিচালকের করে সামনে অনশন করলে ব্যাবস্থাপনা পরিচালক ব্যক্তিগত তহবিল থেকে ২৫ হাজার (পঁচিশ হাজার) টাকা দিয়ে আমার আরো দুজন নারী কলিগের সামনে অতি শিগগিরই সমস্যা সমাধানের প্রতিশ্রুতি দিলেও জানি না সে সমাধান কোন পথে এগোচ্ছে বা আদৌ এগুবে কি না।
আমি বর্তমান নারীবান্ধব ও মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের এই সরকারের কাছে বিষয়টির সুষ্ঠু সমাধান দাবি করি।
আমার এ বিষয়ে আমার শিক্ষক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্য ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, আওয়ামী লীগ নেতা আমীর হোসেন আমু, বাসসের ব্যাবস্থাপনা পরিচালক ও পরিচালনা বোর্ডের চেয়ারম্যান সাহেবকে মানবিক দৃষ্টি দিয়ে বিবেচনার বারংবার অনুরোধ জানিয়েছেন।
বিষয়টির মানবিক সমাধানের অনুরোধ জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ, বাসসের সাবেক চিফ রিপোর্টার আনিসুর রহমান, বাংলা সার্ভিসের প্রধান রুহুল গণি জ্যোতি, বাসসের ইউনিট প্রধান আশিকুর রহমান, রিপোর্টার্স ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান, ক্র্যাব সভাপতি আখতারুজ্জামান লাবলু, ডিইউজে সভাপতি ওমর ফারুকসহ ভোরের কাগজের সিটি এডিটর ইখতিয়ার উদ্দীন, চিফ রিপোর্টার রাশেদ আলী, কূটনৈতিক রিপোর্টার আঙ্গুর নাহার মন্টিসহ সাংবাদিক বন্ধুরা একাত্ম হয়ে বিষয়টির সুরাহা কামনা করেছেন।
আমার পক্ষ নিয়ে তারা আমার জন্য মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিষয়টির সমাধান চেয়েছেন।
যতদূর জানি, প্রধানমন্ত্রী নারীবান্ধব একজন মানুষ। নারীর ক্ষমতায়ন নিয়ে তিনি রীতিমতো সোচ্চার। আমার ব্যক্তিজীবনের এই সমস্যার কথা জানি না তার কানে পৌঁছাবে কি-না। কিন্তু একজন নারী উপরন্তু একজন মানুষ এবং একজন সচেতন সাংবাদিক ও সমাজকর্মী হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর কাছে একটি দাবি জানাতে চাই-আমি চাকরি চাই। চাকরি ফিরে পেতে চাই। কাজ করতে চাই। কাজ ফিরে পাওয়ার অধিকার ফিরে পেতে চাই। সুন্দরভাবে জীবনটা পরিচালিত করতে চাই। সন্তানদের নিয়ে সুষ্ঠুভাবে বাঁচার নিশ্চয়তা চাই। দেশের প্রথম শ্রেণীর নাগরিক হিসেবে ন্যূনতম অধিকার নিয়ে বাঁচতে চাই।-উইমেন চ্যাপ্টার