কালীগঞ্জ (গাজীপুর) : তাই বলে বাড়িতে কেউ না থাকার সুযোগে বাবা তার ছোট্ট শিশুটিকে হাত-পা বেঁধে বাঁশ দিয়ে পেটাবে? নির্মম নির্যাতনের পর গুরুতর আহত ছেলেকে আবার হাসপাতালে নিতেও বাধা দেবে? এ কেমন বাবা? এমন বাবাও কি পৃথিবীতে থাকতে পারে?
এসব প্রশ্ন কালীগঞ্জ উপজেলার বাহাদুরসাদী ইউনিয়নের বেতুয়া গ্রামবাসীকে ভাবিয়ে তুলেছে। বাবা হয়ে নিজের মাদরাসা পড়ুয়া শিশুকে এমন নির্যাতনের ঘটনা তারা আগে শোনেনি।
হতভাগ্য শিশু রিমন (৯) কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পুরুষ ও শিশু ওয়ার্ডের ৩নং বেডে শুয়ে প্রচণ্ড ব্যথায় কাতরাচ্ছে। আর পাশে বসে অঝোরে কাঁদছেন তার মা জেসমিন বেগম।
রিমনকে নির্যাতনকারী তার বাবা আবুল কালামের দুই স্ত্রী। প্রথম স্ত্রী রিমনের মা জেসমিন বেগম সন্তানদের নিয়ে বেতুয়া গ্রামে থাকেন । আর দ্বিতীয় স্ত্রী সুফিয়া বেগম ও দুমেয়েকে নিয়ে কালাম থাকেন উপজেলার মুনশুরপুর গ্রামে ভাড়াবাড়িতে।
রিমনের দাদি নার্গিস বেগম তার অপর ছেলে শামীমের সঙ্গে মুনশুরপুর গ্রামে ভাড়া বাসায় বসবাস করেন।
শিশু রিমনের দাদি নার্গিস বেগম জানান, বছর দুই আগে কালীগঞ্জ পৌর এলাকার মুনশুরপুর মদিনাতুল মনোয়ারা হাফিজিয়া মাদরাসার হেফজে খানায় ভর্তি করা হয় রিমনকে। প্রতি মাসে তার জন্য সব মিলিয়ে মাদরাসা কর্তৃপক্ষকে এক হাজার টাকা করে খরচ দিতে হয়। কিন্তু গেল দু’মাসের টাকা বকেয়া পড়ে যায়। দু’দিন আগে মাদরাসার ‘হুজুর’ (প্রিন্সিপাল) রিমনকে তার বাবার কাছ থেকে বকেয়া বেতনের টাকা আনতে বলেন। বৃহস্পতিবার সকালে রিমনের বাবা আবুল কালাম মাদরাসার পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় ‘হুজুর’ তাকে তার কক্ষে ডেকে নিয়ে এসে বকেয়া বেতনের কথা বলেন। হুজুরের সামনে রিমনও বাবার কাছ বকেয়া বেতন দাবি করে। আর এতে ক্ষিপ্ত হয়ে বাবা কালাম তার ছেলেকে বেতুয়া গ্রামে যেতে বলেন। কথামতো রিমন দুপুরে বেতুয়া গ্রামে যায়। সে সময় বাড়িতে রিমনের মা না থাকার সুযোগে বাবা কালাম তার ছেলের হাত-পা বেঁধে ফেলেন। এরপর কাঁচা বাশ দিয়ে পেটাতে থাকেন। শিশুটির চিৎকারে প্রতিবেশীরা ছুটে এসে তাকে রক্ষা করে।
নির্যাতিত ছেলেকে নিয়ে বাবা কালাম আবারো মাদরাসায় যান। সেখানে গিয়ে রিমনের সুটকেট, বই-খাতা ও বিছানাপত্র পুকুরে ছুঁড়ে ফেলে দেন। এরপর পড়ালেখা বাদ দিয়ে রিমনকে বাড়ি যেতে বলেন।
তবে ভয়ে আতঙ্কে রিমন বাড়ি না ফিরে সোজা দাদির কাছে চলে যায়। দাদি তার শারীরিক অবস্থা দেখে তাকে কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু বাবা কালাম তার ছেলেকে হাসপাতালে নেয়ার পথে বাধা দেন। এক পর্যায়ে স্থানীয়দের সহযোগিতায় রিমনকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করাতে সক্ষম হয় তার দাদি ও মা।
বৃহস্পতিবার বিকেলে কালীগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বেডে আহত শিশুকে জড়িয়ে ধরে বিলাপ করছিলেন রিমনের মা জেসমিন বেগম। আর সাংবাদিকদের প্রশ্নে ফেল ফেল তাকিয়েছিলেন।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কালাম বলেন, ‘আমার ছেলেকে আমি মারছি। এতে কার কি? ছেলে অন্যায় করলে শাসন করমো না? তারে আদর করমো?’
মুনশুরপুর মদিনাতুল মনোয়ারা হাফিজিয়া মাদরাসার মুহতামিন মাওলানা মো. আবু হানিফ বলেন, ঘটনার সময় আমি মাদরাসায় ছিলাম না। তবে ঘটনা শুনেছি। কিন্তু রিমনের ট্রাংক, বই-খাতা ও বিছানাপত্র পুকুরে ছুঁড়ে ফেলে দেয়ার সময় মাদরাসার হুজুর আল-আমিন ও আব্দুল গফুর বাধা দিলেও রিমনের বাবা কালাম সে বাধা মানেনি।
Source : বাংলামেইল২৪ডটকম
সংবাদকন্ঠ.কম |
ফোন: ৮৮ ০২ ৮১৪৪৪৬০, ৮১৪২২৮০ , নিউজ রুম মোবাইল: ৮৮-০১৭১১০৭৪৬১৬
ফ্যাক্স: ৮৮ ০২ ৮১৪২২৮০ ,ইমেইল: sangbadkantha@gmail.com
ঠিকানা : ৬৮/৬৯ ,গ্রীনরোড, কনসেপ্ট টাওয়ার ,৬ষ্ঠ তলা, ঢাকা-১২০৫ ।
কপিরাইট © ২০২০ সকল স্বত্ব ® সংরক্ষিত।
© 2024 সংবাদ কণ্ঠ, All rights reserved.