জুয়েলারী জগতে আলোচনার কেদ্রবিন্দুতে “ডায়মন্ড সিটি” কেবিন ক্রূ/ ফ্লাইট স্টুয়ার্ড নেবে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স (ছেলেমেয়ে উভয়ই) বিনা অভিজ্ঞতায় “কেবিন ক্রু” পদে লোক নিবে নভো এয়ারলাইন্স, যোগ্যতা HSC, আবেদন করতে পারবে ছেলে মেয়ে উভয়ই। অচেনা নায়ক ! Unseen Hero !! কেবিন ক্রু নিয়োগ দেবে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স ,যোগ্যতা উচ্চ মাধ্যমিক ,আবেদন করতে পারবে ছেলে মেয়ে উভয়ই বিনা অভিজ্ঞতায় “কেবিন ক্রু” পদে চাকরি, যোগ্যতা HSC পাশ, বেতন ৮০০০০ টাকা ইউএস-বাংলার বহরে নতুন বোয়িং যুক্ত ‘চাকরির হতাশায়’ ঢাবি গ্রাজুয়েটের আত্মহত্যা ! নতুন ৫ টিভি চ্যানেলের অনুমোদন , মিডিয়াতে কর্মসংস্থানের ব্যাপক সুযোগ জবস এওয়ানের এক যুগ পূর্তি
ঢাকা, মে ৭, ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১, স্থানীয় সময়: ১০:০৮:০০

২১ বছর ধরে রোজা রেখে সঞ্জয় মিত্রের অভিনব প্রতিবাদ

| ১৩ শ্রাবণ ১৪২১ | Monday, July 28, 2014

কলকাতার বাসিন্দা, ৭১ বছর বয়সী এক হিন্দু ২১ বছর ধরে রমজানের সময়ে রোজা রেখে চলেছেন। অযোধ্যায় বাবরি মসজিদ ধ্বংসের বিরুদ্ধে এটা তাঁর ব্যক্তিগত প্রতিবাদ আর সংখ্যাগরিষ্ঠ ধর্মের মানুষ হিসেবে লজ্জাপ্রকাশ। অথচ এমন এক পরিবারের সন্তান সঞ্জয় মিত্র, যাঁদের বাড়িতে ১২৫ বছর ধরে দুর্গাপূজা হয়ে আসছে।রমজানের এক বিকেলে মগরিবের নমাজ শুরু হওয়ার একটু আগেই বাড়ি থেকে জিনস আর খদ্দরের ফতুয়া গায়ে সেই বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলাম মি. মিত্রর সঙ্গে।


কলকাতার মুসলমান প্রধান এলাকা রাজাবাজারের ঠিক যেখানে হিন্দুপাড়া শেষ হয়ে শুরু হয়েছে মুসলমান মহল্লা সেখানেই একটা মাঝারি মাপের খাবার দোকানে ঢুকতেই সবার সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় হলো।একটা টেবিলে বসতে বসতে মি. মিত্র বলছিলেন ইফতারটা বেশিরভাগ দিন বাড়িতেই করেন, তবে মাঝেমধ্যে এই দোকানেও আসেন।


“এই দোকানটায় আসছি প্রায় ৫৫ বছর ধরে। অনেক পাল্টে গেছে। এখানেই প্রথম গোরুর মাংস খেয়েছিলাম মনে আছে। আর তার পর থেকে তো নিয়মিতই খাই,” হাসতে হাসতে বলছিলেন মি. মিত্র।কথা বলতে বলতেই পাশের মসজিদে শুরু হলো মগরিবের নামাজ– আর ইফতার করে দীর্ঘদিনের চেনাপরিচিতদের সঙ্গে রোজা ভাঙলেন সঞ্জয় মিত্র। দোকানের মালিক মুহম্মদ নঈমুদ্দিন, এক কর্মী মুহম্মদ জমিরুদ্দিনের সঙ্গে একই প্লেট থেকে কলা, পাকা পেঁপে, শশা, খেজুর আর তরমুজ খাচ্ছিলেন মি. মিত্র।


এই হিন্দু বন্ধুর রোজা রাখাতে একটু অবাক নন নঈমুদ্দিন। তিনি বলছিলেন, “ প্রথম যখন শুনি যে মি. মিত্র রোজা রাখেন, শুনে খুব ভালো লেগেছিল যে একজন মুসলমানের মতোই তিনিও রোজা রাখেন। এরকম তো কোনও কথা নেই যে রোজা শুধু মুসলমানরাই রাখতে পারবে। সবাই রাখতে পারে। হিন্দুদেরও তো বিভিন্ন পুজোর দিনের উপোস থাকে। আর আমাদের এটা একমাসের উপোস – ব্যাপারটা তো একই।“কখনও বাড়িতে ফল বা রুটি খেয়ে, কখনও বা হালিম খেয়ে গত একুশ বছর ধরে রোজা ভাঙ্গছেন সঞ্জয় মিত্র।খাবারের দোকানে আসার আগে বাড়িতে বসে মি. মিত্র বলছিলেন অযোধ্যার বাবরি মসজিদ ধ্বংসের পরে প্রতিবাদ হিসেবেই রমজান মাসে রোজা রাখতে শুরু করেন তিনি।


“বাবরি মসজিদের ঘটনা ৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর। তখন আমি দিল্লিতে থাকতাম। উত্তর ভারতে তো ওই ঘটনার পরের দাঙ্গা অনেক বেশি হয়েছিল, সেই সময়ে খুব অসহায় লাগছিল– হিন্দু হিসেবে। একজন সংখ্যাগরিষ্ঠ ধর্মের মানুষ হয়ে কিছুতেই মেনে নিতে পারছিলাম না। তখনই ঠিক করি যে আমি নিজেই প্রতিবাদ করব– এককভাবেই,” বলছিলেন সঞ্জয় মিত্র।


যদিও নিয়মিত ধর্মাচরণ করেন না মি. মিত্র, তবে মুসলমানদের ধর্মাচরণের একটা অঙ্গ – রোজা রাখা নিয়ে স্ত্রী প্রশ্ন তুলেছিলেন, তাই বছরে আরও একটা মাস উপোস করেন তিনি – গ্রাম বাংলায় চৈত্র মাসের গাজনের সময়ে।মি. মিত্রের কথায়, “কয়েক বছর রোজা রাখার পরে আমার স্ত্রী বলেছিলেন, তুমি মুসলমানদের মতো রোজা রাখ, কিন্তু নিজের ধর্মের জন্য তো কিছু কর না। তখন আমি বলি যে নমশূদ্র – যাঁরা বেশীরভাগই ভূমিহীন কৃষক, চৈত্র মাসে কোনো খাবার থাকে না বলে গাজনের নামে ভিক্ষা করে সন্ধ্যায় একবারই খায়– আমি সেটা করতে পারি। ভিক্ষাটা পারব না, কিন্তু গাজনের উপোস করি নিয়মিত। আমার উপোস রমজান আর গাজনের।”


নিয়মিত ধর্মাচরণ করেন না বলেই যেমন মন্দিরে যান না, তেমনই রমজান মাসে পাঁচ বার নমাজও পড়েন না একসময়ের কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য আর মানবাধিকার কর্মী সঞ্জয় মিত্র।
বছরের দুই মাস উপোসের সময় তাঁর সঙ্গী বই আর গান।


বামপন্থী আন্দোলনে যখন যুক্ত ছিলেন, তখন যদিও দাঙ্গার সময়ে মুসলমান মহল্লায় গিয়ে সবাই মিলে রাত জেগে পাহাড়া দিয়েছেন, কিন্তু সংখ্যাগরিষ্ঠরা যখন বাবরি মসজিদ ভেঙে ফেলেছে, তার প্রতিবাদটা তিনি একান্তই নিজস্ব ঢঙে করে চলেছেন– কারণ সেই ছোটবেলায় হিন্দু-মুসলমান দাঙ্গায় মৃত্যুর মুখোমুখি হওয়ার স্মৃতিটাও তাঁর একান্তই নিজের।

বিবিসি বাংলা, অমিতাভ ভট্টশালী